কাদিয়ানীর প্রতারণা ও মুহাম্মদী বেগম
★মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর প্রতারণা ও মুহাম্মদী বেগমের ঘটনা★
মিথ্যা ওহীর বানীতে সুন্দরী রমনী মুহাম্মদী বেগমকে বিবাহ করার অপচেষ্টায় ব্যর্থ মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী........বিস্থারিত পড়ুন।।
আহমদিয়া মুসলিম জামা'আত নামক ধর্মের প্রবর্তক মির্জ কাদিয়ানীর একটি ভবিষ্যৎবাণী ছিল, তার সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ হবে।
এটি তার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ ভবিষ্যৎবাণী, এটাকে সে তার বইপত্রে নিজের সত্যতার মাপকাটি হিসাবে পেশ করত।
এখন জানতে হবে যে মুহাম্মাদী বেগম কে..?
মুহাম্মাদী বেগম, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এক আত্মীয় মির্জা আহমদ বেগের কন্যা।
ভারতের হুশিয়ারপুরের অধিবাসী মির্জা আহমদ বেগ এর কন্যা মুহাম্মাদী বেগম, অনিন্দ্য সুন্দরী হওয়ায় মির্জা গোলাম আহমদের কুদৃষ্টিপড়ে যুবতীর প্রতি, তাই নিজের লালসাকে মিটাবার পায়তারায় মুহাম্মাদী বেগমকে বিয়ে করার আগ্রহ জাগে।।
একদিন সে কন্যার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাটায়, কিন্তু মেয়ের পিতা আহমদ বেগ সাহেব এতে সম্মত হননি, মির্জা গোলাম আহমদ, মির্জা আহমদ বেগকে প্রভাবিত করার জন্য জোরে শোরে দুটি কথা তার মূখের উপর ছেড়ে দিলো।
প্রথম কথা,
মুহাম্মাদী বেগম তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এটা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী ও ইলহাম দ্বারা জানতে পেরেছে।
দ্বিতীয় কথা,
কন্যার পরিবার যদি এতে অসম্মতি তবে তার নানা রকম বিপদ আপদে আক্রান্ত হবে, মুহাম্মাদী বেগমের উপরও বিপদ আসবে, এমনকি অন্যত্রে তার বিয়ে হলেও সে বিধবা হয়ে যাবে। তবুও মির্জার সাথে তার বিয়ে হবেই হবে।
প্রিয় পাঠক, মির্জা সাহেব তার প্রত্যেকটি বাক্য এবং শব্দকে খোদাতায়ালার কাছ থেকে প্রাপ্ত ওহী আখ্যা দিয়েছেন এবং ইশতিহার ঘোষণার মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎবানী প্রচার করেছেন।
এবার আমরা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভবিষ্যৎবাণীর শেষ পরিণতি দেখবো, তিনি কী কী শব্দে সেসব ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন তাও জানব, নিছে মির্জা সাহেব কৃত ভবিশ্যতবাণী প্রমান সহকারে তুলে দিলাম।
আরবীর অর্থ:- (মির্জার কথিত ওহী, খোদাতায়ালা বলেছেন) "অতএব তাদের মোকাবেলায় আল্লাহ তোমার জন্য যথেষ্ট, তিনি মুহাম্মাদী বেগমকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দেবেন, এ প্রতিশ্রুতি আমার পক্ষ থেকে এবং আমি এটি করবোই, তাকে তো তোমার সাথে আসমানে বিয়ে দিয়েছি, এটি তোমার প্রভূর পক্ষ থেকে সত্য ওয়াদা, সুতরাং তুমি সন্দেহকারীর দলভূক্ত হবেনা, আল্লাহর বাণী পরিবর্তন হবার নয়, তোমার প্রভূ যা চান তাই করেন, আমি তোমার নিকট তাকে ফিরিয়ে দেবই"।
(সুত্র: আঞ্জামে আথহাম ১৪/৬০)
(রুহানী খাযায়েন ১১/৬০)
হায় আফসোস.....মির্জা সাহের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী মুহাম্মাদী বেগমের সাথে তার বিয়ে বাস্তবায়ন হলনা, বিপরিতে লাহোর অধিবাসী জনাব সুলতান মুহাম্মাদের সাথেই মুহাম্মদীর বিয়ে হল।
যখন মুহাম্মাদী বেগমের বিয়ের পর্ব শেষ হলো তখন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ভবিষ্যৎবাণীর মোড় ঘুরিয়ে ফেললো, আর নতুন করে ঘোষণা দিলো যে সুলতান মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর বিধবা হবার পরে হলেও আমার (মির্জা) সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিয়ে হবে....?
আফসোস এখানেও মির্জার খোদা এতই দূর্বল ছিলো যে, সুলতান মুহাম্মাদের জান কবজ করতে পরলেন না, ফলে মুহাম্মাদী বেগমও বিধবা হলেন না।
প্রিয় পাঠক, বুঝুন কিরকম মিথ্যাবাদী হলে এমন জগন্য মিথ্যা কালাম বানাতে পারে, যে, আল্লাহর নামে মিথ্যা বলতে বুক কাঁপলোনা। আরো পড়ুন
মির্জার এ কেমন খোদা যিনি মির্জার প্রতি প্রেরিত ওহীর বাস্তবায়ন করলেন না, উপরন্তু মুহাম্মাদী বেগম বিধবা হবে তো দূরে থাক, মির্জা নিজেই মুহাম্মদী বেগমকে কাছে না পেয়ে শেষমেশ মরেই গেলো......বে....চা.....রা, অথচ, মুহাম্মাদী বেগম আর তার স্বামী সুলতান মুহাম্মাদের এ পরিবার মির্জার মৃত্যুর পরে আরো বহু বছর জীবিত থাকলো।
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব তার "মাজমু ইশতিহারাত" পুস্তকে মুহাম্মাদী বেগম সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী দিতে গিয়ে আরো লিখছেন (উর্দূ.....)
অর্থাৎ :- খোদাতায়ালা বলেছেন, আমি এ মহিলাকে তার বিবাহের পর তার নিকট ফিরিয়ে আনবো, তোমাকে দেবো, আমার তাকদীর কখনো পরিবর্তন হয় না, আমার অগ্রে কারো কোন কথা বাড়েনা, এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে যত বাধা আছে সব বাধা তুলে দেবো, এখন এ ভবিষ্যৎবাণী দ্বারা এটি সুস্পষ্ট যে, তিনি (খোদাতায়ালা) কী কী পদক্ষেপ নেবেন, কার কার ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করবেন এবং কাকে কাকে প্রতিবন্ধক মনে করে দুনিয়া থেকে নিয়ে নেবেন।
(দেখুন, মাজমু ইশতিহারাত ২/৪৩)
(তাবলীগী রেসালত ৩/১১৫)
প্রিয়বন্ধুরা ও পাঠকবৃন্দ, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এসমস্ত কথা তার চিঠিপত্রে, বইপুস্তক ও প্রচারপত্রে এত জোরে শোরে লিখতে শুরু করল যে, মুহাম্মাদী বেগমের বাবা জনাব মির্জা আহমদ বেগ যদি কোন কাঁচা ঈমানের মানুষ হতেন তবে, নিশ্চিত মির্জা কাদিয়ানীর ফাঁদে পা দিতেন, ভয়ে মির্জা কাদিয়ানীর নিকট কন্যা দান করে ফেলতেন, কিন্তু তিনি ঈমানের জোর থাকার কারণে এমন এক ভন্ড, মিথ্যাবাদীর প্রভাবে প্রভাবিত হন নি, বরং তিনি নিজের সিদ্ধান্তের উপর অবিচল থাকলেন।
এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায়, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, মুহাম্মাদী বেগমকে বিয়ে করার জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন, কারন তিনি আগেই খোদার নামে আগেই ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে দেন।
যখন লাহোর অধিবাসী সুলতান মুহাম্মাদ নামক ব্যক্তিটির সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ ঠিক হয়ে গেল, তখন তাতে বাধা সৃষ্টি করাতে মির্জা সাহেব অনেক আশ্চর্য জনক চেষ্টা তদবির শুরু করলেন, যখন তার সমস্ত চেষ্টা তদবির ব্যর্থ হয়ে গেল, তখন সে তার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী আল্লাহর ইলহামের বরাত দিয়ে আবারো ভবিষ্যৎবাণী করলো, তখন সময়টি ছিলো ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দ, মির্জা সাহেব বললেন "যদি সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিয়ে হয়, তবে বিয়ের পর আড়াই বছরের মধ্যে মুহাম্মাদী বেগমের পিতা মির্জা আহমদ বেগ মারা যাবেন আর মুহাম্মাদী বেগমও বিধবা হয়ে তার বিবাহে আসবেন"।
★★মির্জার ভবিষ্যৎবাণীতে তিনটি চ্যালেঞ্জ★★
১) আড়াই বছরের মধ্যে মুহাম্মাদী বেগমের বয়োবৃদ্ধ পিতা মির্জা আহমদ বেগ মারা যাবেন।
২) মুহাম্মাদী বেগমের স্বামী সুলতান মুহাম্মাদ তিনিও মারা যাবেন।
৩) সুলতান মুহাম্মাদের স্ত্রী বিধবা হয়ে মির্জার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
পরে কি হলো....??
আল্লাহতালার লীলা, খোদাতায়ালার নাম ভেংঙ্গে মির্জা সাহেব যে ভবিষ্যৎবাণী করেছিল (অর্থাৎ:- আমি তাকে তোমার সাথে আসমানে বিয়ে দিয়েছি) এটি বাস্তবায়নের মূখ দেখেনি,
এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার, তা হলো মির্জার অনুসারিরা যখন দেখল, মির্জার ভবিষ্যৎবাণী প্রতিফলিত হয়নি, মুহাম্মাদী বেগমের সাথে না বিয়ে হল, না মুহাম্মাদী বেগম বিধবা হল, না বিধবা হয়ে মির্জার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল, কিছুই হলনা।
কয়েক বছর পরে যখন মুহাম্মাদী বেগমের বয়োবৃদ্ধ পিতার যখন মৃত্যু হলো, তখন মির্জা সাহেব সুযোগ বুঝে প্রচার করতে লাগলো, এটি কিনা তারই ভবিষ্যৎবাণীর ফসল...??
তার এরকম অর্বাচীন কথাবার্তা অত্যাধিক সীমা ছাড়িয়ে যায়, যেখানে মুহাম্মাদী বেগম নামের সুন্দরী মেয়েটি তার কাছে ফিরে আসা-ই ভবিষ্যৎবাণীর প্রকৃত উদ্দেশ্য, সেখানে তার বয়োবৃদ্ধা পিতা মরে যাওয়া তার সত্যতার প্রমান হবে কেন....?
কোন মেয়েকে অপারগ হয়ে তার পিতার মৃত্যুতে খুশি প্রকাশকরা কি মাহদীয়তের চরিত্র...?
মির্জার খোদাও কি এতই দূর্বল যে, মেয়েটিকে মির্জার নিকট ফিরে দিতে না পেরে অবশেষে তার নির্দোষ পিতাকেই মেরে দিতে হলো....?
মানুষ কি মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এসমস্ত ভেল্কিবাজিও অন্ধের মত গ্রহন করে নেবে...না কখনো না।।
মির্জার এরুপ অনেক ভবিষ্যৎবাণী আছে যেগুলোর একটাও সটিক হয়নি বা এর কোন প্রতিফলন ঘটেনি এরকম আরেকটি ভবিষ্যৎবাণী উল্লেখ করছি তা হলো, খৃিষ্টান পাদ্রী আব্দুল্লাহ আথহাম সম্পর্কে মৃত্যুর ভবিষ্যৎবানী করেছিলো, তার সাথে প্রায় ১৫ (পনেরো) দিন তাহরিরী মুনাজিরা শেষে মির্জা সাহেব বলেছিলো, আগামী ১৮৯৪ সালের ৫-ই ডিসেম্বর হবে আব্দুল্লাহ আথহাম এর মৃত্যুর শেষ দিন, আর সেই ভবিষ্যৎবাণী কি অবশেষে মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি, দেখুন...
(জংঙ্গে মুকাদ্দাস ২১১)
(রুহানী খাযায়েন ৬/২৯২)
উপরন্তু সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মিহাম্মাদী বেগমের বিবাহ হয়ে যাওয়ার পরে মির্জা সাহেব দ্বিতীয় মাত্রায় আবার ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে বলল, এটা অদৃষ্টের অলঙ্গনীয় লেখা। কেউ এটাকে পরিবর্তন করতে পরবেনা, সুলতান মুহাম্মাদ মারা যাওয়ার পর অবশ্যই মুহাম্মাদী বেগম তার স্ত্রী হবেন, যদি এটা না হয় তবে সে মিথ্যাবাদী ও নিকৃষ্টতম জীব বলে সাব্যস্ত হবে, কিন্তু আল্লাহতালা তার এসব ধোঁকাবাজিকে ব্যর্থ করে দিলেন এবং তার দম্ব, অহঙ্কার ও শয়তানি দাবিকে ধূ্লোয় মিশিয়ে দিলেন।
১৯০৮ সালের ২৬-শে মে যখন মির্জা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তখনও সুলতান মুহাম্মদ ও তার স্ত্রী মুহাম্মাদী বেগম দুজনই জীবিত ছিলেন এবং সংসার করেন একই সাথে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মৃত্যুর পর সুলতান মুহাম্মাদ ১৯৪৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন, প্রায় ৪০ (চল্লিশ) বছর জীবিত ছিলেন, আর তার স্ত্রী মুহাম্মাদী বেগম ১৯৬৬ সালের ১৯ নভেম্বর লাহোরে ইন্তেকাল করেন, অর্থাৎ, মির্জার মৃত্যুর আরো ৫৮ (আটান্ন) বছর জীবিত ছিলেন,
যাদের পরবর্তী জীবনের প্রতিটি মূহূর্ত ও প্রতিটি দিন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে মিথ্যবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ বহন করে।
প্রিয় আহমদী বন্দুরা সত্যকে মেনে নিয়ে ফিরে আসুন রাসুলে করিম (সঃ) এর রেখে যাওয়া আল্লাহর দ্বীন ইসলামে, ভন্ডনবী, মিথ্যবাদী, কাদিয়ানীকে ছেড়ে অপেক্ষা করুন সে পর্যন্ত সত্যিকারের ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্ব পর্যন্ত, অবশ্যই তিনি আসবেন, ঈসা ইবন মারইয়ামও অবতরণ করবেন, দাজ্জালও বের হবে, কিন্তু আপনারা যদি না ফিরেন তবে আমার আশঙ্কা হয় যে, দাজ্জালের প্রথম যে দলটি তার উপর ইমান আনবে সে দলটিই আহমদিয়া জামা'আত, তাই যদি আল্লাহকে ভালবাসেন, আল্লাহকে ভয় করেন, আল্লাহর রাসুল (সঃ) কে ভালবাসেন তবে ফিরে আসুন সরল পথে..........
আল্লাহতালা আপনাদের হেদায়াতের অন্তরচক্ষু খুলে দিন আমিন।।
মূল লেখা (আফিস) বই থেকে গোলাম মেহেদী
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন