"ওয়ামা ছালাবূহু" ও কাদিয়ানীদের ভ্রান্ততা

 "ওয়ামা ছালাবূহু" ও একটি সংশয় নিরসন

প্রশ্নকর্তাঃ পবিত্র কুরআনে "ওয়ামা ছালাবূহু" বলতে আসলে কী বুঝানো হয়েছে? ইহুদিরা হযরত ঈসা (আঃ)-কে শূলিবিদ্ধ করেনি নাকি ইহুদিরা শূলির উপর তাঁকে হত্যা করতে পারেনি, কোনটা?

উত্তরদাতাঃ ধুর মিয়া! পাগল হলেন নাকি? ইহুদিরা ঈসাকে শূলিতে হত্যা করতে পারল কি পারল না, এটা তো পরের বিষয়! আপনি এত তাড়াতাড়ি এই জায়গায় কেন চলে এলেন? তার আগে তো আরো দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে!

প্রশ্নকর্তাঃ আপনি কী বুঝাতে চাচ্ছেন আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি! বুঝাইয়া বলেন!

জবাবদাতাঃ ও তাই! তাহলে আগে একটা ঘটনা বলি। মনে করুন আপনার ঘরে আগুন লাগল। ঘটনাক্রমে ঘরের ভেতর আপনি আটকে গেলেন। কোনোভাবেই বাঁচার উপায় দেখছেন না। এমন সময় আপনি ফায়ার সার্ভিস অফিসে ফোন দিয়ে বাঁচার আকূতি জানালেন। এখন আপনি আমাকে বলুন, এমতাবস্থায় যেই লোক আগুন থেকে বাঁচার আকূতি জানিয়ে নিজের বিপদের কথা ফায়ার সার্ভিসকে জানাবেন সেই ব্যক্তির সাথে ফায়ার সার্ভিসের আচরণ কেমন হওয়া উচিত? আগুনের হাতে তুলে দেয়া নাকি তাকে আগুন থেকে নিবৃত্ত রাখা? 

প্রশ্নকর্তাঃ অবশ্যই আগুন থেকে তাকে নিবৃত্ত রাখা। কিন্তু ঈসার সাথে এই ঘটনার কী সম্পর্ক থাকতে পারে? 

জবাবদাতাঃ আস্তাগফিরুল্লাহ!  আপনি এ কি বললেন? আপনি কি কুরআন শরীফ পড়েননি? সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতঃ "ওয়ামা কাতালূহু ওয়ামা ছালাবূহু" এই ঘটনার আরেকটু আগে চলুন। দেখুন কীভাবে কী ঘটেছিল? তবেই "ছালাবূহু" এর যেই মর্মার্থ নিয়ে কাদিয়ানিদের সাথে মূলধারার মুসলমানদের মতবিরোধ চলছে সেই পর্যন্ত একদম সহজে পৌছে যাবেন।

সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৫২ হতে ৫৪ দেখুন, তবেই বুঝতে পারবেন যে, হযরত ঈসা (আঃ)-কে ইহুদীরা শূলিবিদ্ধ করবে তো দূরের কথা; তারা তাঁর নাগাল পেতেও সক্ষম হয়নি। 

কেননা সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৫২ এর ভাষ্য মতে, ঈসা (আঃ) যখন কাফেরদের হত্যা ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পারলেন তখন তিনি আপনা হাওয়ারিদের ডেকে বললেন "মান আনছারী ইলাল্লাহ' (কে আছো তোমরা) আল্লাহতায়ালার পথে আমার সাহায্যকারী হবে?" হাওয়ারিগণ তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন (আলে ইমরানঃ ৫৩-৫৪)। এমনকি আল্লাহ তায়ালা ঈসার মনের আকূতির প্রতিউত্তরে তখনি বলেছিলেনঃ ওয়া মাকারূ ওয়ামা কারাল্লাহ ওয়াল্লাহু খাইরুল মাকিরীন অর্থাৎ "বনী ইসরাইলের লোকেরা নবীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল, তাই আল্লাহও কৌশলের পন্থা গ্রহন করলেন, বস্তুত আল্লাহতালাই হচ্ছেন সর্বোত্তম কৌশলী" (আলে ইমরানঃ ৫৪)। এবার নিজেই চিন্তা করুন, ঈসা (আঃ)-এর সাথে উপরিউক্ত ঘটনার সম্পর্ক আছে কি নাই? 

হযরত ঈসা (আঃ)-এর বাঁচার আকূতির সাথে মহান আল্লাহ'র "ওয়াল্লাহু খাইরুল মাকিরীন" তো তখনি পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে যখন ইহুদীদের ইচ্ছার বিপরীতে আল্লাহ'র কৌশল বাস্তবায়িত হবে এবং ঈসার কাছেও ইহুদীরা ঘেঁষতে না পারবে, তাই নয় কি? এখন নিজেই চিন্তা করে দেখুন ইহুদীরা ঈসা (আঃ)-এর কাছেও ঘেঁষতে পারল কিনা?

প্রশ্নকর্তাঃ কিন্তু এসব তো আপনার নিজেস্ব ধারণামাত্র! ইহুদীরা ঈসাকে শূলিতেও তো দিতে পারে! 

জবাবদাতাঃ হায় আল্লাহ! এতক্ষণ কারে কী বুঝালাম! আরে জনাব! আমি তো শুধু আমার ভাষায় এসব বললাম মাত্র। আমার প্রতিটি বক্তব্যের সাথে রেফারেন্স যুক্ত আছে, প্রয়োজনে আবার দেখে নিতে পারেন!

প্রশ্নকর্তাঃ আসলে ভাই সত্যিকরে বলতে গেলে ইতিপূর্বে বিষয়টি কখনো এভাবে ভেবে দেখেনি। যাইহোক, আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি। এখন আমি জানতে চাই "ওয়ামা ছালাবূহু" এর সঠিক মর্মার্থ কী? 

উত্তরদাতাঃ উপরের দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে এবার আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন, "ওয়ামা ছালাবূহু" এর যেই অর্থ কাদিয়ানীরা করতে চায় সেটি যদি সঠিক হয় তখন আয়াতটি ইহুদী-খ্রিস্টানদের দাবীকে প্রত্যাখ্যান করবে নাকি সমর্থন করবে? 

প্রশ্নকর্তাঃ ইহুদী-খ্রিস্টানদের দাবীকে প্রত্যাখ্যান না করে বরং সমর্থন করে কিভাবে? বুঝিয়ে দিন!

উত্তরদাতাঃ ইহুদী-খ্রিস্টানদের দাবী হল, ওরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছে (আলে ইমরানঃ ১৫৭)। আর আল্লাহতায়ালা সেই একই আয়াতে তাদের খন্ডন করে বলছেন-

(১) তারা তাঁকে হত্যা করেনি।

(২) তারা তাঁকে শূলিতেও চড়ায়নি।

(৩) তারা তাঁর ব্যাপারে মতবিরোধ করেছিল।

(৪) তাদের এই মতবিরোধ সন্দেহের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল।

(৫) তাঁর সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞানই ছিলনা।

(৬) তাঁর সম্পর্কে তারা যতটুকু জ্ঞান রাখত তা ছিল অনুমানের ভিত্তিতে।

(৭) এটুকু নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি। 

(৮) আল্লাহতায়ালা পরের আয়াতেই এর সমাধান দিচ্ছেন এই বলে যে, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালা তিনি ঈসাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। 

(৯) তারপরের আয়াতে আল্লাহতায়ালা ঈসা (আঃ)-এর 'রফা' বলতে প্রকৃতপক্ষে কী তার উদ্দেশ্য; মৃত্যুর পরে তাঁর সম্মানবৃদ্ধি করা নাকি জীবিত সশরীরে তুলে নেয়া; এর সমাধান দিচ্ছেন এভাবে যে, আহলে কিতাবগণের মাঝে এমন একজনও থাকবেনা, যে ব্যক্তি তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁর (আকাশে তুলে নেয়া সম্পর্কে আল্লাহতায়ালার এইকথার) উপর ঈমান না আনবে, কেয়ামতের দিন তিনি নিজেই এদের ঈমানের উপর সাক্ষী হবেন।

এখন আপনি বেশি না, উপরের ৪, ৮ এবং ৯ নং পয়েন্টের আলোকে একটুখানিক ভেবে দেখুন তো! কাদিয়ানিদের কৃত অনুবাদ সঠিক ধরতে গেলে ইহুদীদের মুকাবিলায় আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলের মানে ঈসাকে ষড়যন্ত্রকারী ইহুদীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে কিনা? নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ কি তাহলে স্বীয় কৌশল বাস্তবায়নে ব্যর্থ ছিলেন? হায়রে হায়! কাদিয়ানিদের মগজে মির্যার যাবতীয় খিস্তিখেউড় লোড় নেয়, মাগার আল্লাহ'র সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলটা যে কী ছিল তা লোড় নেয় না! পোড়া কোপাল আর কাকে বলে?

মনে করুন, (কাদিয়ানিদের বিশ্বাসমতে) "ইহুদীরা ঈসাকে শূলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত্যুর অনুরূপ ভেবে রেখে চলে গেলেন। তারপর ঈসা (আঃ) গোপনে সেখান থেকে পালিয়ে কাশ্মীর চলে যান। তিনি সেখানে ১২০ বছর পর্যন্ত জীবিত থেকে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।" এখন আমার প্রশ্ন হল, (১) কাদিয়ানিদের উক্ত বিশ্বাসের ভিত্তি কী কুরআন নাকি সহীহ কোনো হাদীস? 

(২) হাদীস এবং ইসলামের ইতিহাস ঘেটে দেখলে ঈসা (আঃ)-এর মাত্র ৩৩ বছরের জীবন-ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় কেন? ৩৩ বছর হতে ১২০ বছরের  মধ্যবর্তী তাঁর আরো ৮৭ বছরের জীবন-ইতিহাস কোথায় গেল? নাকি ঈসার ওই ৮৭ বছরের জীবন ইতিহাস ইসলামের ইতিহাস থেকে হারিয়ে গিয়েছিল?

(৩) আলোচ্য ৪ নং পয়েন্ট দ্বারা বুঝা যায় যে, ইহুদীরা ঈসার অনুরূপ অন্য একজনকে শূলিবিদ্ধ করার পরে আসল ঈসার নাগাল পাওয়া নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়েছিল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকেও এইরকম বর্ণনা আছে যে, فالقي عليه شبه عيسى অর্থাৎ তাকে (ইহুদীদের হাতে শূলিবিদ্ধ লোকটিকে) ঈসার সাদৃশ্য করে দেয়া হয়েছে। দেখুন তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম, খন্ড নং ৩। ইবনে কাসীর (রহঃ) 'তাফসীরে ইবনে কাসীর' গ্রন্থের ২য় খন্ডে এই বর্ণনা এনে লিখেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এর সনদ সহীহ। 

যাইহোক এখন শূলিবিদ্ধ লোকটি যদি আসল ঈসা-ই হতেন তখন তো তাদের কোনোরূপ বিতর্কের প্রয়োজন-ই ছিলনা। যেহেতু শূলিবিদ্ধ ব্যক্তির জন্য মৃত্যুই নিশ্চিত! অধিকন্তু সুপ্রসিদ্ধ আরবী অভিধানগ্রন্থ 'লিসানুল আরব' এর অস্টম খন্ডে লেখা আছেঃ-

 والصلب هذه القتلة المعروفة مشتق من ذلك ؛ لأن ودكه وصديده يسيل

  অর্থাৎ 'ছালাব হচ্ছে প্রসিদ্ধ একধরনের হত্যা। যেহেতু এইরকম হত্যার ফলে ক্রুশবিদ্ধ ব্যক্তির চর্বি এবং তার ক্ষতস্থানের দূষিত রস প্রবাহিত হতে থাকে।' 

এমতাবস্থায় ঈসা (আঃ)-কে ক্রুশবিদ্ধ করার দাবিদারদের কথা সঠিক ধরলে ক্রুশের উপর তাঁর মৃত্যু হয়নি, একথা কিভাবে বলা যায়? কাদিয়ানীরা এর কী জবাব দেবেন? 

মজারব্যাপার হল, শূলিবিদ্ধ ব্যক্তির জন্য মৃত্যু নিশ্চিত - এ কথা শুধু আমাদের নয়, বরং মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই এ কথা লিখে গেছেন। যেমন তিনি লিখে গেছেনঃ ﻣﺼﻠﻮﺑﯿﺖ ﺳﮯ ﻣﺮﺍﺩ ﻭﮦ ﺍﻣﺮ ﮨﮯ ﺟﻮ ﺻﻠﯿﺐ ﭘﺮ ﭼﮉﮨﺎﻧﯽ ﮐﯽ ﻋﻠﺖ ﻏﺎﯾﮧ ﺍﻭﺭ ﻭﮦ ﻗﺘﻞ ﮨﮯ উচ্চারণঃ মাছলূবিয়ত চে মুরাদ ওহ আমর হে যু ছলিব ফর ছড়হানে কি ইল্লতে গাইয়া আওর উহ ক্বতল হে। অর্থাৎ 'ক্রুশবিদ্ধ বলতে ক্রুশের উপর লটকানোর চূড়ান্ত সীমা মৃত্যুই উদ্দেশ্য।' (মির্যা কাদিয়ানী রচিত তাফসীরে আলে ইমরানঃ পৃষ্ঠা ২৮৫ দ্রষ্টব্য)। {স্কিনশট লাগিয়ে দিয়েছি। দেখে নিন}।

এখন কাদিয়ানিদের কথা ধরেই জিজ্ঞেস করতে চাই যে, সেই সময় হযরত ঈসা (আঃ) যদি ক্রুশবিদ্ধ (✝) হতেন তাহলে তো নিশ্চিত যে, ক্রুশের উপর উনার মৃত্যুও হয়েছিল, তাই নয় কি?  

তাহলে 'ছালাব' ( Crucify) এর ব্যবহারিক অর্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কেন বলেন যে, 'ক্রুশবিদ্ধ হয়েও ঈসা (আঃ) হত্যা হননি বরং প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন'?  কথা এখানে শেষ না। যদি সেই সময় ক্রুশবিদ্ধ লোকটি প্রকৃতপক্ষে ঈসা-ই হতেন তাহলে তাঁকে কেন্দ্র করে ইহুদীদের বিতর্কটা কী? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলবে কিনা?

(৪) আলোচ্য ৮ এবং ৯ নং পয়েন্টগুলো একদম পরিস্কার করে দেয় যে, ঈসা (আঃ)-এর এখনও মৃত্যু হয়নি। অন্যথা "কবলা মওতিহি" অর্থাৎ ঈসার মৃত্যুর আগে - এই কথার মানে কি? ঈসা-ই যদি মৃত্যুবরণ করবেন তাহলে সূরা নিসার ১৫৯ নং আয়াতে "ঈসার মৃত্যুর আগে" এর কী অর্থ? সর্বপ্রথম আমাদেরকে এই কথা বুঝতে হবে। তারপর "ওয়ামা ছালাবূহু" এর সঠিক মর্মার্থ নিয়ে ভাবা যেতে পারে।

প্রশ্নকর্তাঃ খুব ভাল লাগল। দারুণ গবেষণাধর্মী কথা বললেন। আচ্ছা 'আছ-ছালবু' (الصلب) এর ইংরেজিতে প্রতিশব্দ কী এবং তার ব্যবহারিক অর্থ কী তা একটু জানতে চাই।

উত্তরদাতাঃ পবিত্র কুরআনে 'আছ-ছালবু' (الصلب) শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Crucify (ক্রুসিফাই)। শব্দটি পবিত্র কুরআনের প্রায় ৬ স্থানে এসেছে। সূরা আলে ইমরান ৫৫, সূরা ইউসুফ ৪১, সূরা ত্বাহা ৭১, সূরা আশ-শু'আরা ৪৯ এবং সূরা মায়েদা ৩৩ অন্যতম। এর শাব্দিক অর্থ শূলিবিদ্ধকরা অথবা শূলে রাখা।

এবার শব্দটির ব্যবহারিক অর্থ জানতে "স্টুডেন্ট'স ফেভারিট ডিকশনারি" নামক ইংলিশ ডিকশনারি হাতে নিয়ে দেখুন। সেখানে সুস্পষ্টভাবে Crucify এর অর্থ লিখা আছে - Put to death by nailing on a cross. অর্থাৎ পেরেগ দ্বারা বিদ্ধ করিয়া প্রাণ বধ করতে শূলির উপর রাখা।

অথবা আপনি Crucify লিখে সার্চ দিয়ে উইকিপিডিয়া থেকেও দেখে নিতে পারেন। সুস্পষ্ট লেখা আছে  To put to death by nailing or binding the wrists or hands and feet to a cross. অর্থাৎ হাতে পায়ে পেরেগ বিদ্ধ করিয়া বা বাঁধিয়া প্রাণ বধ করতে শূলে স্থাপনকরা। (ইউকিপিডিয়া)।

খেয়াল করুন, সব কয়টি অভিধানে ইংরেজি ভাষার ক্রিয়াপদ  Put (রাখা বা স্থাপনকরা)  এসেছে। ফলে 'ওয়ামা ছালাবূহু' এর আক্ষরিক অর্থ দাঁড়াচ্ছে 'তারা তাঁকে শূলিবিদ্ধ করেনি'। আর ব্যবহারিক অর্থ দাঁড়াচ্ছে 'তারা তাকে হাতে পায়ে পেরেগ বিদ্ধ করিয়া বা বাঁধিয়া প্রাণ বধ করতে শূলে স্থাপন করেনি। (ইউকিপিডিয়া)।

সুতরাং ছালিব বা ক্রুশের উপর ঈসার মৃত্যু হল কি হল না, এই বিতর্কটাই পুরোপুরি অবান্তর। কারণ, পবিত্র কুরআন যেখানে আমাদের বলছে, ইহুদীরা ঈসাকে শূলিতে স্থাপন করেনি সেখানে শূলির উপর ঈসার মৃত্যু হওয়া-না হওয়ার প্রশ্ন আসবে কেন? 

প্রশ্নকর্তাঃ আপনার বক্তব্য হল, ঈসাকে যেখানে শূলিতেই রাখা হয়নি সেখানে শূলির উপর তাঁর মৃত্যু হল কি হল না; এই প্রশ্নটাই পুরোপুরি অবান্তর বলতে চাচ্ছেন তাই কিনা? 

উত্তরদাতাঃ জ্বী হ্যাঁ। আপনি উপরেই পরিস্কার করে এটাও জেনে আসছেন যে, যাকে শূলিতে স্থাপন করা হবে তার জন্য মৃত্যু নিশ্চিত। খোদ মির্যা কাদিয়ানী থেকেও একথার স্বীকারোক্তি আছে। মির্যা কাদিয়ানী রচিত তাফসীরে আলে ইমরান ৫৫ দ্রষ্টব্য।

কাজেই ঈসাকে শূলে স্থাপন করার দাবী যাদের তারা যদি একই সাথে শূলির উপর ঈসার মৃত্যু হয়নি বলেন, তাহলে এর অর্থ হবে আকাশে সূর্য উদিত হল কিন্তু পৃথিবী আলোকিত হয়নি অথবা সাজিদকে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হল কিন্ত সে ভিজেনি। অথচ এর সবই পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা। চিন্তাশীল কাদিয়ানিদের উচিত বিষয়টি শেষবারের মত আরেকটিবার ভেবে দেখা।

প্রশ্নকর্তাঃ আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

পরিশেষে বলতে চাই, হযরত ঈসা (আ:)-কে ইহুদীরা শূলিবিদ্ধ করেছিল তবে শূলির উপর তাঁর প্রাণ নষ্ট হয়নি - কাদিয়ানিদের এরূপ মনে করা সর্বপুরি একটি বিভ্রান্তি ও চিন্তার অত্যধিক দুর্বলতার আলামত। আমরা মনে করি, মহান আল্লাহ সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতে যেটি বলে দিয়েছেন সেটিই অকাট্য সত্য। ফলে আমাদের বিশ্বাস করা ফরজ যে, ইহুদীরা না ঈসাকে স্বাভাবিকভাবে হত্যা করল, না পেরেগ বিদ্ধ করে প্রাণ বধ করতে শূলির উপর তাঁকে স্থাপন করল; কোনোটাই করতে পারেনি। বরং সূরা মায়েদার ১১০ নং আয়াত 'ওয়া ইয কাফাফতু বনী ইসরাইলা আ'নকা' দ্বারা পরিস্কার জানিয়ে দেয়া হল যে, আল্লাহতায়ালা ইহুদীদেরকে ঈসা (আঃ) থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলেন। তার মানে ইহুদীরা ঈসাকে শূলির উপর স্থাপন করবে তো দূরের কথা, তারা তাঁর নাগালও পায়নি। সুতরাং "ওয়ামা ছালাবূহু" ক্ষেত্রে কাদিয়ানীদের কৃত অনুবাদটি ভুল এবং কুরআন-বিরোধী। তাই গত চৌদ্দশত বছর ধরে সালফে সালেহীনগণ এর যেই অর্থ "ইহুদীরা তাঁকে শূলিবিদ্ধ করেনি" করে গেছেন সেটাই একমাত্র সঠিক অর্থ। আল্লাহপাক আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

লেখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী। সংগ্রহ গোলাম মেহেদী।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন